সোমবার, ২২ মে, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন ৩৮



রাজু আহমেদ মামুন


গরানের বনে ঘাপটি মারে মানুষ খেকো বাঘ

মিঠে রক্তের স্বাদ সে পেয়ে গেছে
এক ভয়াল ঝড়ের শেষে। মানুষের ভেসে আসা লাশ
ছিল প্রথম আহার। তারপর-
ক’টা দিন কেটে গেছে তৃপ্তি ঘুমে। এখন মানুষ ছাড়া
কিছুই খাবে না আর।
বয়সী মোয়াল জানে
গরানের ক’টি পাতার আড়াল থেকে
মাটি ফুঁড়ে যেন উঠে আসে বাঘ,
মেধাবী শিকারী বটে!
তবু মানুষের কাছে সে দণ্ডপাওয়া পশু
বনান্তে নেমেছে তাই দণ্ডধারী মানুষের দল।

মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন ৩৯


রাজু আহমেদ মামুন


মন্দ্রীভূত চোখে দেখেছে সে- ক্রুদ্ধ ব্যাঘ্র চোখ,

দণ্ড হাতে পিতা, স্বপ্নের ভেতর
করেছে প্রহার। বলেছিল-
আবার বাঘ শিকারে! কেন এসেছিস ?
আগেও কী করিনি বারণ!
বাদার গহনে নায়ের ছৈয়ের তলে
ভাতঘুম জেগে কাতরায় গাজী।
পিতা পিতামহ ছিল বাঘেদের যম
ব্যাঘ্র উদরেই হয়েছে তাদের ঠাঁই , তবু-
পচাব্দি গাজী, গাজীর বেটা, সাহস যার নাম
মেরেছে যে নরখেকো আশি নব্বই...
সে কিনা শিশুর মতো ঘুম জেগে কাঁদে!
সঙ্গীরা অবাক।
শপথ নিয়েছে গাজী-ফিরে যাবে বাড়ি
বনের বাঘেরা তবে বনেই বেঁচে থাক।
* কবিতাটি সুন্দরবনের জগৎখ্যাতো বাঘ শিকারী পচাব্দি গাজীর মিথ অবলম্বনে লেখা।

রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন ৪০



 ম্যানগ্রোভ মন কাব্যগ্রন্থের শেষ কবিতা

রাজু আহমেদ মামুন
১.

জেগেছে ঘূর্ণি হাওয়া ঢেউ উৎসব
প্লাবন দিন,আকাশের মুখে
ঘনিয়েছে পাগলা বয়াল মেঘ
বাইনের বিশ্বস্ত শাখা ছেড়ে অরণ্য গহীনে
উড়ে গেছে তিলা ঈগল, বাঁশিচোরা, ভীমরাজ
পাখিদের ঝাঁক,গহীন আশ্রয়ে
ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি,হরিয়াল,
পাতার আড়াল ছেড়ে লাজুক ডাহুক
অশান্ত বাতাস আজ বনবিবির বিপন্ন আঁচলে
গোলবন ছেড়ে বাওয়ালির নাও মোয়ালের নাও
ফিরেছে লোকালয়ে,বেসামাল জল
কুমির উঠেছে ডাঙায়
উৎসব আজ বায়ু আর জলের গতির
উৎসব লড়াইয়ের,উৎসব বাঁচার মরার
ছুটছে দাঁতাল শুকর শিঙ্গাল হরিণ
বানর মোষ বাঘ,একই পালে
বাঘের পায়ে পায়ে হরিণ শাবক
ঘন বন আরো ঘন বন ঠিকানা সবার, যেখানে
পৌঁছাবে জল হারিয়ে গতি।
আজ ছোঁবে না কাউকে কেউ
খাবে না কাউকে কেউ, শিকার ভুলেছে বাঘ
আজ সকলেই বায়ু আর জলের শিকার।

২.

বাতাস জেগেছে বাতাস তীব্র দীপ্র বাতাস
ঘুরছে প্রবল ঘুরছে বাতাস, বাতাসের চরকি,
চরকিতে হঠাৎ লেগেছে গতির চোট
সমুদ্র ছুটছে ডাঙায় বৃক্ষেরা প্রহরী দেয়াল
বাতাস দিয়েছে জলের ক্ষিপ্র গতি জলের গর্জন
এ প্রলয় বাতাস আর জলের যৌথ আয়োজন।
ঈগল ডানার তলে কাঁপছে কেউটে সাপ
জন্তুরা হয়েছে জড়ো, আসন্ন মৃত্যুর উৎসব বেয়ে
জীবনের রেখা যেন হয়ে যায় বড়।
সিবসা, রায়মঙ্গল, মালঞ্চ, বলেশ্বর
যতসব বুনোনদী হারিয়েছে জলের তলায়
জল সে আজ তীব্র ত্রাসের ছুরি!
নিযুত নিযুত পাগলা বয়াল বাতাস
জাগিয়েছে শিঙের তান্ডব
 ছিঁড়েখুঁড়ে টুকরো টুকরো উড়ছে চরাচর

উড়িয়ে ঘুরিয়ে আছড়ে ফেলছে জলে
জল দুমড়ে গিলছে ধরাতল
কাঠপোকাদের নিরাপদ গ্রামে পৌঁছে  গেছে
তীব্র ত্রাসের ছুরি

বায়ু আর জল জীবনের নিয়ামক
জীবন সংহারে হলো তাদের উৎসব।

৩.

কেটেছে গতির ঘোর ক্লান্ত বাতাস
সাগরের জল ফিরেছে সাগরে
নদীরা দৃশ্যমান।
ঠোঁটহীন মাড়ির ভেঙচি পড়ে আছে
মুচড়িয়ে ভাঙা বৃক্ষশরীর।
গীলা লতার প্যাঁচে,ভাঙা গুড়ির নিচে
অথবা নদীর শরীরে ভাসছে গানহীন পাখি আর
ডাকহীন পশু।
বেঘোর মৃত্যুরাতের স্মৃতি বেয়ে
বিস্তীর্ণে নেমেছে নিঃশব্দ হাহাকার।

৪.

হাহাকার হাহাকার
নিঃশব্দে নিদারুণ ঘন হাহাকার।
ঘুম বন। কে কাটাবে রাত!
আহত কুকপক্ষীর ভাঙা গলায়
বেজে ওঠে বিকৃত আওয়াজ।
নড়ে ওঠে বনতল
মগডালে পাখা ঝাড়ে শিকারী ঈগল।










জ্যোৎস্না ফুলের বাগান



ম ম মগ্ন মাহেন্দ্রে চেয়েছিলে নিমজ্জন,পরস্পরে…
তাই কী ফুটিয়েছিলে জ্যোৎস্না ফুলের বাগান !
স্তোত্রের কামনাবাহী ধ্বনীপুঞ্জে আসেনি কী এমন মৌতাত!

তোমার স্বপ্নের উপত্যকায় যখন
প্রিয়তমা পুজারিনী আজ তুমি নেই।

কোথায় সে জ্যোৎস্না ফুলের বাগান !
আমি দৌড়ে ফিরি ছুঁয়ে দিতে তা সব
যা যা ছুঁয়ে ছিলে তুমি।

হায় জ্যোৎস্না ফুলের বাগান !
আজ সব ধারালো প্রবাল, পাথুরে কঙ্কাল
রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছি গো পুজারীনী
রক্তাক্ত…!


---------------------------------------------------------------------------------রাজু আহমেদ মামুন,কাব্যগ্রন্থ:দহনসংক্রান্তরি কবিতা(প্রকাশ২০০৬,ম্যাগনাম ওপাস)

ম্যানগ্রোভ মন ১

রাজু আহমেদ মামুন বনবিবি আহা বনদেবী তোমার পেটানো গড়ন শ্যামলকান্তি দেহ লাবণ্য লাবণ্য খেলা একা একা কাহারে দেখাও! অমন শ্যামল আদুরে আদুরে...