বুধবার, ২১ জুন, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন -৩২


রাজু আহমেদ মামুন

ক.
ঢেউয়ে দুলে বালিহাঁস নাও, বুকে জল ঠেলেঠেলে
বনপথে, বুনোখালে বাওয়ালি বহর।
ঘোরলাগা বাদারে মাঝির পাকা চোখ উড়িয়ে দেয়
দৃষ্টির চিল, জানে কোন গহনে পৌঁছবে বহর।
খ.
এবার গল্প চান্দাবাঘের এবার গল্প গাজীর
বনবিবির রাজ্যে যখন বহর এসে হাজির।
গ.
হাড়িতে হাড়িতে টুংটাং আওয়াজ
ঘনবনে পড়েছে বহর
বাওয়ালির চোখে ইলশে ঝিলিক
সম্মুখে সুন্দরী গাছের পক্ব বাগান।
ঘ.
গাছে গাছে করেছে ভিড়; এসেছে উৎপাত, বানরের পাল,
বয়সী বাওয়ালি জানে বাদারে বাঘের শত্রু বানর,মানুষের বন্ধু হয়।
তবে বনবিবি বড় নিষ্ঠুর দেবী, বেঘোরে কেড়ে লয় প্রাণ,
দেয় বিপুল বৈভব, সব দেয় বনবিবি, তাই ডাঙ্গায় বাওয়ালির দল।
ঙ.
কারো ভাবনায়- বন মোরগের ঝাঁক
কারো ভাবনায়- একটা যদি হরিণ
কারো ভাবনায়- খালের কূলে নেমেছে কি মেছবাঘ!
গলদা চিংড়ি কাদায় পুঁতে যদি পেরোবে বাঁক
তবে বাঘে ধরা মাছ খাবে বাওয়ালির দল।
শুকনো মরিচ ঝালে লাল ভাজি মোটা চিংড়ি
আহ! ফেনা ভাত।

সোমবার, ১৯ জুন, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন -৩৩


রাজু আহমেদ মামুন

(‘হাম লোহু অ ফেছা লোহু/শানা শুনা শাহারা/হাত্তা এজা বালাগা/
আশাদ্দাহু বালাগা/আরবাইনা ছানাতা’- বাঘচালানের মন্ত্র, সংগৃহীত)
ক.
বাওয়ালিরা কাঠ খোঁজে মোয়ালেরা মৌ
কেউ কেউ কি যে খোঁজে জানে না তা কেউ!
মানুষ মন্ত্র ছোঁড়ে- বাতাসে মিলায়
মনের অতৃপ্তি নিকাশ মনে মনে হয়।
বন মন্ত্র ছুঁড়লে- বাঁধা পড়ে মানুষের মন
বনে পাওয়া জানেনা কেন সে এমন।
খ.
বুনো বাতাসের ঘোড়ায় চেপেছে ফেনা ভাত আর সালুনের গন্ধ,
বাওয়ালি বহর পাশে বানরের ভিড়, এসেছে বনযোগী, মিলবে-
জীবনের প্রসাদ, রাত্তিরে হবে বুনো খালপাড়ে বাঘ চালানের মন্ত্র পাঠ।
গ.
একচল্লিশ দিন রাত বনে বনে দৌড়াবে বাঘ
কিছুই খাবেনা, যদি দৌড়ের পথে
শিকার না দেয় ধরা, এসব মন্ত্রের তেলেশমতি,
মন্ত্রদাতা কহে। এবার তবে বাঘ চালানের পালা।
মাটিতে চাপর কাটা বুড়া যোগীর শীর্ণ হাতে
বাঘের হুংকার, শশ্রূমুখে শ্লোকের স্রোত
চোখের চাবুকে মন্ত্রের ঘোড়া দৌড়ায় বাতাসে বাতাসে
মন্ত্রঘায়ে লাফিয়ে ওঠে গাজী কালু বনবিবি
দাবড়ায় সারা বন।
মুগ্ধ বাওয়ালি মনে জাগে বাঘেদের দৌড়
চাদপাই, সুপতী, রায়মঙ্গল হয়ে
সারা বন জুড়ে দৌড়ায় সারি সারি কাল্পনিক বাঘ
নামে স্বস্তির নিশ্বাস, নির্ভয়ে কাটা যাবে কাঠ।

শনিবার, ১৭ জুন, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন -৩৪


রাজু আহমেদ মামুন

শরীরে এসেছে জোয়ার, ঘুম ঘুম বুনোনদী
ফুলে ফেঁপে দুর্বার।
ধার,জলের কী ধার! তবু হবে পার রাজবাঘ-
ঠিক ঠাক সোজা সোজা।
হাঙর কুমির দেখবে বিস্ময়ে
জলে তুলে শক্তির তুফান
বনান্তে পেরিয়ে যাবে এ রাজসিক উল্লাস
মানুষের প্রতিজ্ঞার মতো।

বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন ৩৫


রাজু আহমেদ মামুন


সন্ধ্যার আন্ধার গিলে নিলে নিকারীর নাও
প্যাঁচানো খালের বাঁকে তবুও তা থাকে!
নাড়াখেলে কুমিরের লেজে আন্ধারে
আলো ঝলকায় লোনাজল
গলুইয়ে মগ্ন বকের মতো নিকারী জোয়ান
ভাসে বাসনার বিচিত্র ছবির মাঝে
বনান্তে- দূর গাঁয়ের কোনো নয়াল জোয়ানী
কাঁকড়ার কৌণিক সোহাগী চলন যার
সেইতো করেছে চুরি প্রাণের লাটাই
যেতে হবে তার কাছে
অভাব টানছে পিছু- মেলেনা হিসেব...
বাসনার কর্দম ডাঙ্গায় যার নিত্য আসে
দারিদ্রের লোনাজল, তার প্রাণে বাড়ে টান
প্রাণ টানে প্রাণ, জাগে স্বপ্নের শ্বাসমূল।

শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন ৩৬


রাজু আহমেদ মামুন


বনবিবির সিঁথির মতোন যে খাল হারিয়েছে

গহীন বনের নিভৃতে- তার বাঁকে
ফুটে থাকে সাদা সারসের ঝাঁক।
বিচিত্র মুদ্রায় ওরা ফোটায় কবিতা,
সেখানে মাছের রূপকথা,নিকারীর নাও-
সেই পথ খুঁজে- ফেলে টঙ ঘর।
মানুষ এমন-
যার গন্ধ পেলে মিইয়ে যায় প্রকৃতির প্রতিভাস ।

বুধবার, ৭ জুন, ২০১৭

ম্যানগ্রোভ মন ৩৭


রাজু আহমেদ মামুন


জেগেওঠে ভোরে- ভোঁদড়ের গ্রাম
গর্তমুখে দলপতি দ্যাখে চারপাশ
প্রতিবেশী খুব বেশি নেই আর
কমে গেছে শত্রু,মিত্র, শুধু
খালের ওপার,দূরে- বাইনের সুউচ্চ শাখায়
ক’টা দিন বসে আছে ঠায়, এক রুগ্ণ বাঙাল শকুন
গুনছে মৃত্যু প্রহর। এ পাড়ায়-
আর আসে না মায়াহরিণ,গোখরো,ঘড়িয়াল
মাঝে মাঝে ঊর্ধ্বশ্বাসে চলে যায় বাঘ।
কেবল মানুষ আসে, খালে ঢালে বিষ, মরে ভাসে-
জলের মাছ, ভোঁদড় আরও কত কী!
একদা বনের গোপন এ খাল পাড়ে-
ছিল ভোঁদড়ের রাজ। ধীরে ধীরে বাস্তুগুলো-
হয়ে গেছে খালি। বিশ্বস্ত এ জলে মাছে -এমন মরণ!
কারণ জানেনা ভোঁদড়...
যেন নামছে তাদের গাঁয় রুগ্ণ শকুনের বিপন্ন প্রহর ।

ম্যানগ্রোভ মন ১

রাজু আহমেদ মামুন বনবিবি আহা বনদেবী তোমার পেটানো গড়ন শ্যামলকান্তি দেহ লাবণ্য লাবণ্য খেলা একা একা কাহারে দেখাও! অমন শ্যামল আদুরে আদুরে...